উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়নের রামনাথপুর,মাহমুদকাঠি পুরোনো খেয়াঘাট এলাকার নদী পাড়ে রয়েছে দেড় শতাধিক জেলে পরিবার।
মাস দেড়েক পর এলাকার অধিকাংশ পুরুষ মাছ ধরতে যাবে বঙ্গোপসাগরে। সেখানে থাকবে কমপক্ষে পাঁচ মাস।এজন্য মহাজন,মাঝিদের পাশাপাশি ব্যস্ত সময় পার করছেন কপোতাক্ষ নদী পাড়ের জেলে পরিবরাগুলোর নারী সদস্যরা।
এলাকার জয়ন্তী বিশ্বাস, রিতা বিশ্বাস, স্বষ্ঠী রানী বিশ্বাস, সন্ধ্যা বিশ্বাস, অসীমা বিশ্বাস, শেফালী বিশ্বাস ওই জেলে পরিবারের সদস্য। তাদের স্বামী-সন্তানরা প্রতিবছরই পাঁচ মাসের জন্য বঙ্গোপসাগরে যায়। এই পাঁচ মাসের তাঁরা আয় করে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা।
আর পুরো বছর ধরে এখানকার নারীরা জাল তৈরি করে আয় করেন। তারা প্রত্যেকে প্রতিদিন আয় করেন ১শ’ থেকে ৩শ’ টাকা।
তাদের সাথে নদী পাড়ের খাস জমিতে থাকা এসব পরিবারের পুরুষরা নৌকা তৈরি, নৌকায় আলকাতরা দেওয়া, ড্রামে তেল ভরা, কাছি মেরামত, বাঁশ খুঁটি জোগাড় করা, জালে গাব দেওয়ার কাজে ব্যস্ত।
সংসারের কাজ সেরে ঘরের বারান্দায় বসে জাল বুনছেন অসীমা বিশ্বাস। তিনি জানান, একটি বেন্টি জালে প্রায় দু’মণ সূতা লাগে। ১০/১২ জন মিলে ভাগে ভাগে জাল বুনি। একটি জাল বুনতে সময় লাগে প্রায় ১ থেকে দেড় মাস।
একই এলাকার স্বষ্ঠী রানী বিশ্বাস জানান, এখন আমরা দিন চুক্তিতে কাজ করি কম। এখন আমরা ১০/১২ জন মিলে জালের অর্ডার নেই। সেই জাল বুনে দিয়ে একবারে টাকা নেই। তাতে আমাদের বেশি লাভ হয়।
রামনাথপুর এলাকার চরন কুমার বিশ্বাস জানান, আমার ৪টি নৌকা সাগরে যাবে। সেই জন্য ৪টি বেন্টি জাল প্রয়োজন। সেই জাল বুনে (তৈরি) দিয়েছে এলাকার নারীরা। এছাড়া ঘেরা জাল, খেওলা জালও তারা বুনতে পারে। ৮/১০ জন নারী মিলে বেন্টি জাল বোনে। একটি জাল ২শ’ হাত লম্বা হয়ে থাকে। প্রতিটি জালে প্রায় ৪০/৪৫ হাজার টাকা মজুরি হয়ে থাকে। সংসারের যাবতীয় কাজ সেরে জাল বোনার কাজ করে এইসব পরিবারের নারীরা।
তারা অতিরিক্ত টাকা আয় করে। যা তাদের পরিবারকে সহায়তা করে। ৮০/৮৫ হাজার টাকা খরচ করে জাল বুনলে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় সেই জাল বিক্রি করা যায়।
এ বিষয়ে খুলনার মহিলা বিষয়ক জেলা কর্মকর্তা নার্গিস ফাতেমা জেবিন বলেন, পাইকগাছার নারীরা যে জাল বুনছে সেটি নারীর ক্ষমতায়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এর মাধ্যমে একদিকে তারা নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছে, তেমনি তাদের পরিবারও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের যদি ঋণের প্রয়োজন হয়, তবে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।